ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি রোহিঙ্গাদের সাথে বৈঠক আগের অবস্থানেই অনড় মিয়ানমার

উখিয়া প্রতিনিধি :: কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের আলোচনা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবারও আলোচনা চলবে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে তৃতীয় দফায় মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে আলোচনায় অংশ নিলেন। কিন্তু গত আড়াই বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমার ফেরত নিতে সক্ষম হয়নি দেশটি। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্ধিত-৪ এর সরকারি অফিসে গতকাল বুধবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এ আলোচনা চলে। রুদ্ধদ্বার আলোচনায় মূলত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে শান্তিপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা যায়। উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্প থেকে ৫ নারী ও ৪১ জন রোহিঙ্গা পুরুষ এ আলোচনায় অংশ নেন।

পক্ষান্তরে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক চ্যান আইয়ের নেতৃত্বে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে সংযুক্ত ছিলেন আসিয়ানের-ইরাতের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। আলোচনা শেষে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতা সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণভাবে রাখাইনে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের গৃহীত যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা তুলে ধরা হয়। আমাদের পক্ষ থেকে রাখাইনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, পুনর্বাসন, সামাজিক উন্নয়নে গৃহীত বাস্তবায়িত প্রভৃতি ব্যবস্থার ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিদ্যমান আইন অনুসরণ করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার আবদুর রহিম বলেন, গত দুই বছর ধরে মিয়ানমার যেসব কথা ও আশ্বাস দিয়ে আসছে আজকের আলোচনায় সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করেছেন। রোহিঙ্গা নেত্রী সেতারা বেগম, জামালিদা ও সাদেকা খাতুন বলেন, আলোচনাকালে মিয়ানমার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশ তর্কাতর্কি হয়েছে। তারা বলেন, মিয়ানমার পূর্বের অবস্থানে বহাল থেকে বলেছেন, ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের মাস দুয়েক ট্রানজিট ক্যাম্পে থেকে এনভিসি নিয়ে নিজ নিজ পাড়া গ্রাম বা পছন্দমত স্থানে যেতে পারবে। কিন্তু আমরা বলেছি অভ্যর্থনা ক্যাম্প থেকেই রোহিঙ্গাদের স্ব স্ব পাড়া গ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থা করা, নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা দিতে হবে। অন্যান্য নাগরিকদের ন্যায় রোহিঙ্গাদের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারেরও কোন নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি বলে রোহিঙ্গারা জানান।

ক্যাম্প-২ এর চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফা বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি নাগরিকত্ব যাচাই কার্ড বা এনভিসি গ্রহণ না করা, পুরনো কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের অভ্যর্থনা ক্যাম্প থেকে নাগরিকত্ব প্রদান করা, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জায়গা জমি ফেরত প্রদান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। কিন্তু মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আগের অবস্থানে অটল থেকে তাদের কোন অধিকার মানেননি। দীর্ঘ আলোচনায় কোন বিষয় নিয়ে কোন পক্ষ একমত হতে পারেননি বলে উভয় পক্ষের বক্তব্যে দৃশ্যমান। রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে ৪৭ জন নেতা নেত্রী আলোচনায় অংশ নেন।

মিয়ানমারের পক্ষ থেকে চ্যান আইয়ে ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন, সামাজিক কল্যাণ ত্রাণ এবং পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহা পরিচালক ড. কো কো নাইং, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিভাগের উপ মহা পরিচালক থেট উইন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের পুলিশ কর্নেল জ থী হ, শ্রম, অভিবাসন এবং জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ইন তোয়ে, রাখাইন প্রদেশের জেলাপ্রশাসক সোয়ে অং, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিভাগের উপ পরিচালক ওয়ে উই মিন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিক নে লিন ও ল লিন অং, আসিয়ানের সামাজিক ও মানবিক সংস্থা ইরাতের প্রতিনিধি দলের সদস্য নাগুইন কি আন, আবদুল আলিম সিদ্দিক বিন আবদুল হাদি, আমেল কপেল কপিলি, গ্যারেক ইনদিনা, নুরা মো. ইউসুফ, মিয়াস রাসমি ও মেথাউই থে চুন উয়ান।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদনান তাহিয়ান, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ দৌজা, উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল মনসুরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ।

পাঠকের মতামত: